১৯৪৪ সালে রাফায়েল লেমকিন নামে একজন পোলিশ আইনজীবী জেনোসাইড শব্দটি প্রথম ব্যবহার করেন।
গ্রীক উপসর্গ 'জেনোস' - যার অর্থ জাতি এবং ল্যাটিন প্রত্যয় 'সিড' - যার অর্থ হত্যা, এই দুটি শব্দ ব্যবহার করে তিনি জেনোসাইড শব্দটি তৈরি করেন।
তাঁর এই কাজটি আংশিকভাবে হলোকাস্টের প্রতিক্রিয়া হিসাবে হয়েছে, তবে এর পেছনে আগের কিছু ঘটনাও দায়ী ছিলো।
ইন্টারন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন অব জেনোসাইড স্কলারসের প্রেসিডেন্ট ড. মেলানি ও'ব্রায়েন বলেন, লেমকিনের প্রচারণার কারণেই ১৯৪৮ সালে গণহত্যা বিষয়টি স্বীকৃতি পায় এবং এটিকে আন্তর্জাতিক অপরাধ হিসেবে বিবেচনা করা শুরু হয়।
এ বিষয়টিকেই আমরা এখন জেনোসাইড কনভেনশন হিসেবে জানি।
যেসব দেশ কনভেনশনের চুক্তির 'পক্ষ' অবলম্বন করেছে কেবল তারাই এটি অনুসরণ করতে বাধ্য।
আর বিশ্বের ১৯৫টি স্বীকৃত দেশের মধ্যে ১৫৩টি দেশই এই চুক্তির পক্ষ নিয়েছে।
সাধারণভাবে এটিকে একটি সরল প্রক্রিয়া বলে মনে হতে পারে, যেখানে কোনো রাষ্ট্র বা ব্যক্তিকে আদালতে নিয়ে যাওয়া হবে, তারপরে প্রমাণ উপস্থাপন করা হবে, এবং তার ফলে গণহত্যার আইনী স্বীকৃতি পাওয়া যাবে।
আদালতের আদেশের মধ্যে ক্ষতিপূরণ, সেই সহিংসতার পুনরাবৃত্তি না করার প্রতিশ্রুতি বা এমনকি বাস্তুচ্যুত লোকদের ফিরে আসার সুযোগ দেয়ার প্রক্রিয়াও অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে।
এরকম শত শত ঘটনা এবং পরিস্থিতি রয়েছে যা গণহত্যার সংজ্ঞার মধ্যে পড়তে পারে।
তবে নিউ সাউথ ওয়েলস বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক আইনের অধ্যাপক সারাহ উইলিয়ামস বলছেন, হাতে গোনা কয়েকটি ঘটনাই কেবল গণহত্যার আইনি স্বীকৃতি পেয়েছে।
ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিসে আসা মাত্র চারটি মামলা গণহত্যা কনভেনশনের সাথে জড়িত ছিলো, এর পেছনে প্রধান কারণ হচ্ছে, কেবলমাত্র কোনো দেশই এই অভিযোগ আনতে পারে।
অবশ্য ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে অনেকগুলো দেশ এতে জড়িত হয়েছিল, যখন অস্ট্রেলিয়াসহ ৩২টি দেশ রাশিয়ার বিরুদ্ধে ইউক্রেনের গণহত্যার মামলায় সমর্থন দেয়।
তবে এই মামলার ফলাফল আসতে এখনও অনেক বছর লেগে যেতে পারে।
প্রফেসর উইলিয়ামসের মতে যা সিস্টেমের আরেকটি ত্রুটি তুলে ধরে, তা হচ্ছে এর অতি ধীর প্রক্রিয়া।
তবে চূড়ান্ত আদেশ আসার আগে আদালত সাময়িকভাবে কিছু পদক্ষেপ নেওয়ার অনুরোধ করতে পারে।
কিন্তু ব্যক্তি বিশেষের ক্ষেত্রে কী হয়ে থাকে? গণহত্যার জন্য কাউকে কীভাবে জবাবদিহি করতে বাধ্য করা যায়?
প্রতিষ্ঠার পর গত ২২ বছরের মধ্যে ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল কোর্ট গণহত্যার দায়ে মাত্র একবার গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে।
সেটি ঘটে ২০০৯ সালে, সুদান প্রজাতন্ত্রের প্রেসিডেন্ট ওমর হাসান আহমেদ আল বশিরের আমলে দারফুর গণহত্যার সময়।
তবে তাকে এখনও গ্রেফতার করে আদালতের সামনে হাজির করা হয়নি।
গণহত্যা প্রমাণ করার পেছনে অনেক রাজনৈতিক ও আইনগত বিষয় জড়িত থাকে।
কিন্তু আমরা এই শব্দটি আন্তর্জাতিক আইনের প্রসঙ্গ ছাড়াও প্রায় নিয়মিত ব্যবহৃত হতে দেখি।
নিউইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্র্যাকটিস ইন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল ল বিভাগের অধ্যাপক ভাসুকি নেসিয়াহ বলেন, প্রতিবাদ ও শোক প্রকাশের উপায় হিসেবেও 'গণহত্যা' শব্দটি ব্যবহার করা যেতে পারে।
অধ্যাপক নেসিয়াহ বলেন,
'গণহত্যা' একটি শক্তিশালি শব্দ, এর পেছনে একটি কারণ হলো এটাকে খুব সহজেই শনাক্ত করা যায়।
তিনি আরও বলেন, ১৯৪৮ সালে আন্তর্জাতিক অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হওয়ার পর থেকে 'গণহত্যা' শব্দটি নিয়ে বিতর্ক চলছে, তবে এ সংক্রান্ত বিষয়ে আমাদের সবসময় কঠোর আইনি সংজ্ঞার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকা উচিত নয়।
সম্পূর্ণ প্রতিবেদনটি শুনতে উপরের অডিও-প্লেয়ারে ক্লিক করুন
This episode of SBS Examines delves into the controversial history of the crime of genocide and looks at how the word is used today.