গুরুত্বপূর্ণ দিক
- বৌদ্ধ ধর্মের পর ক্রিসমাস আইল্যান্ডের ইসলাম দ্বিতীয় বৃহত্তম ধর্ম।
- অধিকাংশ অনুসারিরা মালয় বংশোদ্ভূত।
- দ্বীপের ইসলামিক স্কুলটি কয়েক দশক ধরে চলছে, যেখানে প্রাক্তন ছাত্ররাই এখন শিক্ষক।
এক উষ্ণ গ্রীষ্মের দিনে, ক্রিসমাস আইল্যান্ডের একটি মাত্র স্কুল থেকে সমস্ত বয়সের শিক্ষার্থীরা তাদের বাইক এবং সেগওয়েতে করে ভারত মহাসাগরের উপকূলে অবস্থিত শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ইসলামিক স্কুলের ভবনটির দিকে যাত্রা করে।
১৯৪২ সালে জাপানি বাহিনী যখন দ্বীপটি দখল করে তখন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় আহত সৈন্যদের চিকিৎসার জন্য এই ভবনটি ব্যবহৃত হতো। এই স্কুলকে আরবি ভাষায় মাদ্রাসা বলা হয়, এবং এটি কয়েক দশক ধরে চলছে। এখানে প্রাক্তন শিক্ষার্থীরাই এখন শিক্ষক।
একাদশ শ্রেণীর ছাত্র ইসমাইল ইব্রাহিম, সে কুরআন থেকে সূরা ইয়াসিন তেলাওয়াত করতে পছন্দ করে। এই সূরাটি তার ৪০ বছর বয়সী শিক্ষক আজলি আলবাশ্রী ব্যাখ্যা করেছেন পবিত্র গ্রন্থের হৃদয় হিসেবে।
আলবাশ্রী সেই কিশোর-কিশোরীদের কাছে একজন বন্ধু এবং আত্মবিশ্বাসী শিক্ষক, যারা স্বেচ্ছায় ক্লাসে আসে। এখানে শিক্ষার ভাষা মালয়।
দ্বীপের একমাত্র মসজিদে অস্ট্রেলিয়ান অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসকে তিনি বলেন, "আমাদের বাবা-মা এবং আমাদের মধ্যে ভাষার প্রতিবন্ধকতা ছিল। ব্রিটিশ শাসনে ইংরেজি ছাড়া অন্য কোনো ভাষায় কথা বলার জন্য আমার বাবা-মা স্কুলে বেতের পিটুনি খেতেন।"
"আমি সবসময় আমার বাচ্চাদের বলি যে তোমরা আমার দরজায় প্রবেশ করার সাথে সাথেই আমাদের মাতৃভাষায় কথা বলো। আমরা আমাদের ভাষা হারাচ্ছি," আলবাশ্রী দুঃখ করে বলেন।

The Islamic school is housed in what was a building to treat wounded soldiers during World War Two when Japanese forces occupied the island in 1942. Source: AAP / Bianca De Marchi
"এটি শুধুমাত্র একটি উদ্বাস্তুদের দ্বীপ নয়, এটি আমাদের খ্যাতির বিষয়," তিনি বলছিলেন।
"আমাদের কমিউনিটি বহুসংস্কৃতির।"
এই সম্প্রদায়ের নেতা হিসাবে সম্মানিত, মৃদুভাষী জয়নাল আব্দুল মজিদ তার প্রথম বর্ষে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বাচ্চাদের ইসলামের নীতি শেখান।
"আমরা জন্মগতভাবে মুসলিম, আমাদের বাবা-মা মুসলমান ছিলেন, আমাদের এটি চালিয়ে যেতে হবে, আমরা ধর্মের গুরুত্ব দেখি, এমনকি আমি নিজেও মাদ্রাসার মাধ্যমে উঠে এসেছি," তিনি বলছিলেন।
দ্বীপে জন্ম ও বেড়ে ওঠা ৬৪ বছরের মজিদ একজন খনি পরিকল্পনাকারী, একজন ইউনিয়ন কর্মী, একটি হালাল সুপার মার্কেটের মালিক এবং এক সময় ইসলামিক কাউন্সিলের সভাপতি ছিলেন।
এখন তিনি উচ্ছল তরুণ শিক্ষার্থীদের কয়েক ঘন্টার জন্য মূল্যবান পাঠ দিচ্ছেন, সপ্তাহে দুবার তাদের মালয় ভাষায় শিক্ষা দিচ্ছেন।
"দ্বীপটি একটি ছোট জায়গা... সবাই একে অপরকে চেনে, এটি নিরাপদ, এটি তরুণ কোন পরিবারকে বড় করার জন্য একটি দুর্দান্ত জায়গা, এখানে বাচ্চারা যে কোনও জায়গায় ঘুরে বেড়াতে পারে, তারা সমুদ্রে গোসল করে, ভিজে ফিরে এসে ক্লাসে আসে।"

The Masjid At-Taqwa is Christmas Island's only mosque. Source: AAP / Bianca De Marchi
ক্রিসমাস আইল্যান্ড একটি প্রাক্তন ব্রিটিশ উপনিবেশ এবং সমৃদ্ধ ফসফেটের জন্য খ্যাত। দ্বীপটি ১৯৫৮ সালে অস্ট্রেলিয়ার ভূখণ্ডের অংশ হয়ে ওঠে।
অস্ট্রেলিয়ার ভূখণ্ডে পরিণত হওয়ার পর দ্বীপে জন্মগ্রহণকারী ইমাম আবদুল গাফফার ইসমাইল ৩০ বছর ধরে মুসলিম সম্প্রদায়ের সেবা করছেন।
৬০ বছর বয়সী ইসমাইল মালয়েশিয়া এবং পাকিস্তানে তার ধর্মতাত্ত্বিক অধ্যয়ন করার জন্য দ্বীপ ছেড়েছিলেন এবং ১৯৯৩ সালে ফিরে আসেন।
"আমি ফিরে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছি কারণ তাদের (ক্রিসমাস আইল্যান্ডবাসীদের) নিয়মিত ইমাম (মুসলিম প্রার্থনা পরিচালনাকারী) ছিল না। আমি দ্বীপে জন্মগ্রহণ করেছি তাই ফিরে আসা আমার জন্য ছিল সহজ," তিনি বলছিলেন।
"ধর্ম পালন ইসলামের একটি অনন্য রূপ। এটি একটি ছোট জায়গা, এখানে পার্থের মতো বড় শহরগুলির মতো সবকিছু খুব বেশি পরিবর্তনশীল নয়, তাই ঐতিহ্যকে ধরে রাখা যায়।"
ইসমাইল বলেন, "আমাদের এখানে আলাদা সংস্কৃতি আছে কারণ আমাদের জীবনধারা আলাদা। এটা ক্রিসমাস আইল্যান্ড ইসলাম," ইসমাইল বলেন।

Imam Abdul Ghaffar Ismail returned to Christmas Island to be the community's prayer leader. Source: AAP / Bianca De Marchi
সন্তান প্রত্যাশী মায়েদের এখনও প্রায় ২,৫০০ কিলোমিটার দূরে পার্থ ভ্রমণ করতে হয়, এজন্য পরিবারগুলো সন্তান জন্ম দিতে ভ্রমণের জন্য আংশিক ভর্তুকি পায়।
এই ইমাম মালয় সম্প্রদায়ের ভূমিকাকে প্রজন্মের বৃদ্ধির জন্য গুরুত্বপূর্ণ মনে করেন।
"তরুণদের অভিজ্ঞতা কম বলে তারা মনে করে যে তারা এতই শক্তিশালী যে তারা একাই একটি পাথর উঠাতে পারবে, কিন্তু জ্যেষ্ঠরা বলে যে আপনি নিজে তা একা করতে পারবেন না, আমাদের এটি একসাথে করতে হবে, অন্যথায় আপনি আপনার মেরুদন্ড ভেঙে ফেলবেন," তিনি ব্যাখ্যা করেন।
"এটিই নবী মোহাম্মদের পদাঙ্ক অনুসরণের প্রতীক।"
এসবিএস রেডিও সম্প্রচার-সূচী হালনাগাদ করেছে, এখন থেকে প্রতি সোম ও বৃহস্পতিবার, বিকাল ৩টায়, এসবিএস পপদেশীতে আমাদের অনুষ্ঠান শুনুন, লাইভ।
কিংবা, পুরনো সময়সূচীতেও আপনি আমাদের অনুষ্ঠান শোনা চালিয়ে যেতে পারেন। প্রতি সোম ও শনিবার, সন্ধ্যা ৬টায়, এসবিএস-২ তে।