গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলো
- কোনো ব্যক্তির জৈব (বায়োলজিকাল) বয়স তার কালানুক্রমিক বয়স, যা তার জন্ম তারিখ থেকে নিরূপিত হয়, তা থেকে ভিন্ন হতে পারে বলে গবেষকগণ বলছেন।
- তারা বলছেন, দেহের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের বয়স নিরূপণ করার মাধ্যমে কোনো ব্যক্তি উপকৃত হতে পারেন; বিশেষত, যার মধ্যে আগেভাগেই বুড়িয়ে যাওয়ার বিভিন্ন লক্ষণ দেখা দিয়েছে।
- তারা আশা করছেন, ভবিষ্যতে, ডাক্তারের কাছে রুটিন চেক-আপের সময়ে দৈহিক (অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের) বয়স নিরূপণ করা হবে।
অস্ট্রেলীয়রা যে-রকম মনে করেন, তাদের বয়স তার চেয়ে বেশি হতে পারে।
গবেষকরা বলছেন, কোনো ব্যক্তির মস্তিষ্ক এবং অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের জৈব বয়স তারা নিরূপণ করতে পারেন। আর, এর মাধ্যমে তারা চ্যালেঞ্জ করছেন সেই বিশ্বাস ও প্রথাকে, যেখানে মানুষের জন্ম তারিখ থেকে তার বয়স নিরূপণ করা হয়ে থাকে।
যাদের মাঝে অল্প বয়সেই বুড়িয়ে যাওয়ার নানা লক্ষণ দেখা দেয়, তাদের জন্য এটি একটি শুভ সংবাদ। কারণ, গবেষকরা মনে করছেন, এক্ষেত্রে আগেভাগেই কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা সম্ভব হবে, যা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
‘নেচার মেডিসিন’-এ প্রকাশিত এ সংক্রান্ত সমীক্ষটির লিড অথর ড. ইয়ে এলা টিয়ান। তিনি ইউনিভার্সিটি অব মেলবোর্নের ডিপার্টমেন্ট অব সাইকিয়াট্রিতে কাজ করেন। তিনি ও তার সহকর্মীরা দেখান যে, কোনো ব্যক্তির কালানুক্রমিক বয়স কীভাবে তার অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের বয়স থেকে ভিন্ন হয়ে থাকে।
এই গবেষক দলটি মানুষের মস্তিষ্ক এবং শরীরের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলোর, যেমন, হৃৎপিণ্ড, ফুসফুস, অস্থি ও মাংসপেশী, কিডনি, যকৃৎ এবং রোগ-প্রতিরোধ-ক্ষমতা ও পরিপাকতন্ত্রের কার্যাবলী খতিয়ে দেখেন। ইউনাইটেড কিংডম বায়োব্যাংক স্টাডি নামক এই সমীক্ষায় অংশ নেন ১০০,০০০ (এক লক্ষ)-এরও বেশি পূর্ণ-বয়স্ক মানুষ।
ড. টিয়ান বলেন,
“আপনার বয়স পুরোপুরিভাবে আপনার জন্ম তারিখ দ্বারা নিরূপিত হয় না। আর, আপনার হৃৎপিণ্ডের জৈব বয়স নিবিড়ভাবে সম্পর্কিত আপনার আরও বহু অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের বয়সের সঙ্গে।”
“তাই, আপনার কালানুক্রমিক বয়সের চেয়ে আপনার হৃৎপিণ্ডের বয়স বেশি প্রতীয়মান হলে, এর মানে হলো, আপনার কিডনি, ফুসফুস, অস্থি এবং মস্তিষ্কের বয়সও বেশি হবে।”
“আপনার মস্তিষ্ক এবং দেহের তারুণ্য ধরে রাখা গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের বয়স বেড়ে যাওয়ার বিষয়টি রোগ-ব্যাধি এবং মৃত্যুর সম্ভাব্য সূচক।”
প্রফেসর অ্যান্ড্রু জালেনস্কি বলেন, কোনো ব্যক্তির অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের বয়স নিরূপণের ক্ষেত্রে তারা বিভিন্ন ধরনের ব্রেইন ইমেজিং ডাটা, রক্তের নমুনা থেকে তথ্য এবং অন্যান্য শারীরবৃত্তীয় মানদণ্ডও ব্যবহার করেছেন।
গত সোমবার এএপি বার্তা সংস্থাকে তিনি বলেন, “অনেকগুলো বায়োমার্কার এবং মানদণ্ড ইতোমধ্যে নিয়মিতভাবে ক্লিনিক্যালি ব্যবহৃত হচ্ছে। তাই, সেগুলো এভাবে নিরূপণ করা সম্ভব।”
“(ভবিষ্যতে) ব্যক্তিদেরকে পরীক্ষা করার পরিকল্পনা নেই; কিন্তু, আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে সেই সব লোককে পরীক্ষা করা, যাদের রোগ-প্রবণতা আছে কিংবা যাদের মাঝে ঝুঁকি রয়েছে। এর মানে হলো, অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের বয়স নিরূপণ করার মাধ্যমে চিকিৎসকগণ তাদের অবস্থা সম্পর্কে জানতে পারবেন এবং আগেভাগেই উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবেন।”
এই সমীক্ষাটিতে অংশগ্রহণকারীদের বয়স ছিল ৩৭ থেকে ৭৩ বছরের মধ্যে। তাদের কারও কারও দীর্ঘস্থায়ী স্বাস্থ্য-সমস্যা ছিল।
ড. টিয়ান বলেন,
“আমরা আশা করি যে, ভবিষ্যতে, দীর্ঘস্থায়ী রোগব্যাধির ঝুঁকিগ্রস্ত ব্যক্তিদেরকে চিহ্নিত করার জন্য, ডাক্তারদের ক্লিনিকে আপনাদের মস্তিষ্ক এবং দেহের জৈব বয়স রুটিন মাফিক পরীক্ষণ করা হবে।”
এসবিএস বাংলার অনুষ্ঠান শুনুন রেডিওতে, এসবিএস বাংলা অডিও অ্যাপ-এ এবং আমাদের ওয়েবসাইটে, প্রতি সোম ও শনিবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে ৭টা পর্যন্ত।