এ বছরের শুরুর দিকে ওয়াইকিট ইউং নিজের গাড়ীতে থাকতেন। ৩১ বছরের এই শিক্ষার্থী ছয় বছর আগে হং কং থেকে অস্ট্রেলিয়ায় আসেন, তিনি টাসমানিয়ার টাসটেইফে (TasTAFE) কমার্শিয়াল কুকারী পড়ছেন।
এই বিষয়ে শিক্ষা শেষ করে তিনি কাজ পেতে অনেক কষ্ট করেছেন, আর তা আরো কঠিন হয়ে পরে যখন করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব হানা দেয়।
তিনি এসবিএস নিউজকে বলেন, "মহামারী শুরুর ওই সময়ে আমি একটা বাড়ীতে থাকতাম, কিন্তু আমার জমানো অর্থ শেষ হয়ে গেলে আমার নিজের গাড়িতে থাকা শুরু করি।"
তার স্ত্রী এবং কন্যা চায়নাতে বাস করেন, কিন্তু ট্রাভেল রেস্ট্রিকশনের কারণে তিনি তাদের গত এক বছর ধরে দেখতে যেতে পারেন না।
তিনি বলেন, "চীনের ঐতিহ্যে আপনজনদের ফেলে মানুষদের দূর-দূরান্তে বাস করার দৃষ্টান্ত আছে, কিন্তু এটা খুব কষ্টকর।"

Waikit Yung graduated from a commercial cookery course last year, and is now using those skills to volunteer. Source: SBS News: Sarah Maunder
"তারা চায়নাতে নিরাপদে আছে....আমি শুধু ভাবছি আমার নিজের জন্য অস্ট্রেলিয়াতে চলার মত কিছু একটা পেলেই হয়।"
ওয়াইকিট বতর্মানে অস্ট্রেলিয়াতে ব্রিজিং ভিসাতে রয়েছেন। তিনি ৪৮৫ গ্রাজুয়েট ভিসায় আবেদন করেছেন, এবং আশা করছেন তার স্ত্রী এবং কন্যাকে নিয়ে আসতে পারবেন, কিন্তু এখনো তার আবেদন অনুমোদিত হয়নি। তিনি জবকিপার স্কিমের জন্য যোগ্য নন।
এ সময় হোবার্টের একটি দাতব্য সংস্থা দা ওয়েলস্প্রিং অ্যাঙ্গলিকান চার্চ তাকে সাহায্য করছে। প্রাদুর্ভাব শুরু হলে ওই চার্চটি শো হোপ চ্যারিটির মাধ্যমে সংকটে থাকা আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের মাঝে গরম খাবার, গ্রোসারি, এবং অন্যান্য দৈনন্দিন জিনিসপত্র সরবরাহ করতে থাকে।
চার্চটি ওয়াইকিটের জন্য বাসস্থানেরও ব্যবস্থা করে, বিনিময়ে তিনি শো হোপের জন্য খাবার তৈরিতে সাহায্য করেন, এতে প্রায় ৭০০ আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী প্রতি সপ্তাহে উপকৃত হচ্ছে।
ওয়াইকিট প্রত্যাশা করছেন, কষ্টে থাকা অন্যান্য শিক্ষার্থীরাও সহায়তা নিতে উৎসাহিত হবে।
'সাহায্য চাইতে সঙ্কোচ বোধ'
ওয়েলস্প্রিং অ্যাঙ্গলিকান চার্চ-এর ইউনিভার্সিটি প্যাস্টর স্যাম গওফ বলেন, অনেক শিক্ষার্থীদের সাহায্য দেয়া কঠিন, কারণ তারা সাহায্য নিতে সংকোচ বা অপরাধবোধে ভোগে।
তিনি বলেন,"অনেক শিক্ষার্থীই যেচে এসে সহায়তা নিতে ভীষণ অনীহা প্রকাশ করেছে।"
"কেউ কেউ খাবার পেয়ে এমনকি ক্ষমাও চেয়েছে। আমি তাদের খাবার দিতে চাচ্ছি, তারপরেও তারা নিতে অস্বীকার করছে, অথচ আমি জানি তাদের কোন অর্থ নেই, তাদের সাহায্য খুবই দরকার।"
Image
রেডক্রসের কর্মী জুলি গ্রোম বলেন, অনেক অভিবাসীরা যারা অস্থায়ী ভিসায় আছেন, তারা কোন ধরণের সাহায্য বা আর্থিক সহায়তা পেতে লজ্জিত, বিব্রত বা ভীত থাকেন।
তিনি বলেন, "জরুরি সাহায্য দিতে গিয়ে এই পরিস্থিতি সকলেই লক্ষ করেন।"
"আমরা অনেক লোককে দেখেছি তারা যেচে সহায়তা নিতে বিব্রত হন.....যদি কোন আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী শেয়ারহাউজে থাকেন, তবে তারা প্রকাশ্যে আসতে চান না কারণ তারা এতে শঙ্কায় থাকেন যদি কোন হাউজমেট তাদের দেখে ফেলে।"
"অনেক পুরুষলোক, বিশেষ করে বাবারা যারা সংসারের মূল উপার্জনকারী, তাদের অনেকেই জীবনে প্রথমবারের মত আয় হারিয়েছেন।"
বাংলাদেশ থেকে ইউনিভার্সিটি অফ টাসমানিয়ার আইটি শিক্ষার্থী সুস্মিতা রায় ২০১৮ সালে অস্ট্রেলিয়ায় আসেন। ২১ বছরের এই শিক্ষার্থী গত দু'সপ্তাহ ধরে শো হোপে স্বেচ্ছাসেবার পাশাপাশি হটমিল এবং গ্রোসারি গ্রহণ করছেন।

Julie Groom is the Migration and Emergency Services Lead for the Red Cross in Tasmania. Source: SBS News: Sarah Maunder
এই সময়ে তিনি তার এক ভালো বন্ধুকে সহায়তা নিতে রাজি করাতে চেষ্টা করছেন, কিন্তু সেই পুরুষ বন্ধুটি আগ্রহী নয়।
"সে শো হোপ সম্পর্কে জানে, আমি তাকে কয়েকবার বলেছি, এমনকি আমাদের কয়েকজন অন্যান্য বন্ধুও তাকে বলেছে, আমরা জানি তার সহায়তা খুবই দরকার, কিন্তু সে সাহায্য চাইতে খুবই বিব্রত বোধ করছে।"
"সে কাজ হারায়নি, কিন্তু তার শিফট কমে গেছে, এবং সে আর্থিক সংকটে আছে।"
সুস্মিতা মহামারীর এই সময়ের মধ্যেই তার শেষ শিক্ষাবর্ষ সম্পন্ন করছেন। তার মা-বাবা, ভাই-বোন বাংলাদেশে থাকেন, তার মা-বাবা তাকে আর্থিক সাহায্য দিলেও কোভিড ১৯ -এর ফলে অবস্থা খারাপ হয়ে গেছে।

Shushmita Roy says one of her friends is too embarrassed to be seen collecting food from a charity. Source: SBS News: Sarah Maunder
তিনি বলেন, "পরিস্থিতি এতো খারাপ যে ব্যাংকের লেনদেনেও সমস্যা হচ্ছে। সেখানে ভাইরাসে শনাক্তের সংখ্যাও প্রতিদিন ক্রমেই বাড়ছে, তাই আমার বাবার পক্ষে অর্থ পাঠানো কঠিন হয়ে পড়েছে।"
"আমি তাদের জন্য দুশ্চিন্তায় আছি, কারণ বাংলাদেশের পরিস্থিতি মোটেও ভালো নয়, সেখানে অনেকে ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে আছে, কিন্তু তারা হয়তো তা জানেই না। "
আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের জন্য কি সহায়তা আছে?

Anita Lincolne-Lomax says there is a misconception in Australia that international students come from wealthy families. Source: SBS News: Sarah Maunder
ইউনিভার্সিটি অফ টাসমানিয়ার একজন কর্মকর্তা বলেন, ওয়েলস্প্রিং অ্যাঙ্গলিকান চার্চ ছাড়াও তাদের নিজস্ব কিছু ব্যবস্থা আছে। তারা স্থানীয় এবং আন্তর্জাতিক সকল শিক্ষার্থীদের জন্য বিভিন্ন গ্রান্টস, গ্রোসারি এবং দৈনন্দিন প্রয়োজনের জন্য ভাউচার, পড়াশোনার জন্য ল্যাপটপ এবং অন্যান্য সামগ্রী, আর্থিক সাহায্য, বাসস্থান এবং টিউশন ফী দিতে সময় দিচ্ছে।
TasTAFE একইভাবে সহায়তা করছে। এছাড়া টাসমানিয়ান সরকার আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের এককালীন ২৫০ ডলার করে নগদ সহায়তা দিয়েছে।
শিক্ষার্থীদের মধ্যে যারা সমস্যায় আছেন তাদেরকে ইউনিভার্সিটি এবং কলেজগুলোতে যোগাযোগ করতে উৎসাহিত করা হয়েছে। পাঠকদের মধ্যে কেউ মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কিত সাহায্য চাইলে -এর ১৩০০ ২২ ৪৬৩৬ এই নাম্বারে ফোন করুন।
আরও পড়ুনঃ